অনলাইন শিক্ষা নিয়ে ইতোমধ্যে বেশ কিছু লেখালেখি হয়েছে। গুরুত্ব বিচারে আমরাও কিছু অবদান রেখেছি কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এখনও প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। সেসব নিয়ে আজকে আমাদের লেখা।
সম্প্রতি প্রকাশিত লেখাগুলো পড়ে মনে হচ্ছে অনলাইন শিক্ষা ধারণাটি অতি প্রাচীন না হলেও অতি সাম্প্রতিকও নয়। পাশ্চাত্যের অনেক দেশের অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় এ কার্যক্রম করোনার উদ্ভুত ও অগ্রযাত্রার আগেই শুরু করেছে। সে কারণে আমাদের প্রস্তাবছিল করোনা মোকাবিলার অন্ততঃ বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ে আমাদের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে চলে যাওয়া উচিত এবং আমাদের পক্ষে এটা সম্ভব। দেশের ৪৬ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আমরা একজন যারা প্রথমেই ধারায় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছি।
আমাদের কাছে আদর্শ ছিল ৯০ এর দশকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গুগল, ইয়াহু ও এওএল জাতীয় প্রযুক্তিবাদীগণ। তারা অনলাইন শিক্ষা নিয়ে গত শতাব্দীতেই আলাপ আলোচনা শুরু করলেও ২০০০ সালের প্রথম দশক থেকেই যুক্তরাজ্যের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গতানুগতিক শিক্ষার পাশাপাশি অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে। কমনওয়েলথ অব লার্নিং তাত্ত্বিক জ্ঞান নির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইন পদ্ধতিতে নির্বিঘ্নে সমাপ্ত করলেও অতিমাত্রার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষাকে যথোপযুক্ত ভারসাম্যতার প্রয়োজনে মিশ্রণ শিক্ষণ’ অনুসরণ করে আসছে। তাদের উদ্ভাবিত দূর শিক্ষন কার্যক্রমের নাম হয়েছে ভার্চুয়েল শিক্ষা বা অনলাইন শিক্ষা। তারা দেখলেন ভৌগলিক ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্যে বা যারা ট্রাফিক সমস্যায় জর্জরিত এই অনলাইন কার্যক্রম ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে।
যাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ভৌতিক অবকাঠামো নেই বা যাদের সুশিক্ষিত ও নিবেদিত শিক্ষকমণ্ডলী নাই, তারাও এই পদ্ধতির উপকারভোগী হতে পারেন। চাকরি বাকরি করে কিংবা সন্তান প্রতিপালন করে শিক্ষার্থীরা ইচ্ছে করলে নিজের মন মতো করে সুযোগ ও সময়ের ব্যবহার করতে পারে।
অর্থাৎ এই শিক্ষা কার্যক্রম সময় ও স্থান নিরপেক্ষ একারনে শিক্ষার্থীগণ তার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ব্যবহার করে যে কোন দিনের যে কোন সময়ে এই অনলাইন ক্লাশে যুক্ত হতে পারে। আমাদের প্রাপ্ত বাস্তবতায় হরতাল, ধর্মঘট, সর্বনাশা করোনা, ট্রাফিক জ্যাম, হোষ্টেলের ধারণ ক্ষমতা, লাইব্রেরির ধারণ ক্ষমতা, খণ্ডকালীন বা পূর্ণকালীন চাকরি করেও অনলাইনে নিয়মিত শিক্ষার্থী হওয়া সম্ভব।
অনলাইন শিক্ষায় অর্জিত ডিগ্রি যে কিউএসএস ব্যাংকিং এ উপরের স্থানে ক্রমশঃ এসে গেছে এবং নিয়োগ কর্তাগণ এসব ডিগ্রিকে যথার্য গুরুত্বও দিচ্ছেন। কারণ এ শিক্ষায় ‘অল সার্ভিস লার্নিং’ এর বদলে সেলফ সার্ভিস লার্নিং এর সুযোগ বিদ্যমান। ফলে অনলাইন শিক্ষায় শিক্ষার্থী সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। এ ব্যবস্থায় মূল্যায়ন পদ্ধতির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্নটি একটি মৌলিক প্রশ্ন। মূল্যায়নে যদি সমষ্টিগত পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়, তাহলে অসাধুতার প্রশ্নটি যতটা মুখ্য, তার বিপরীতে যদি নিরবচ্ছিন্ন মূল্যায়ন ব্যবস্থা গৃহীত হয় তবে তা সামান্যই চিন্তার কারণ। আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিরবিচ্ছিন্ন ধারাটি ব্যবহার করে আসছে বলে অনলাইন কার্যক্রমে তারা স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। সামষ্টিক বা বৎসর শেষের মূল্যায়নের বাস্তব সমস্যা চিহ্নিত করেই বুয়েট নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসরণ করতে শুরু করে। গতানুগতিক ক্লাশরুম ভিত্তিক তিন বা চার ঘণ্টার মূল্যায়নের পরীক্ষায় জ্ঞানের পরীক্ষা বা দক্ষতার যাচাই তেমন একটা হয় না, যেমনটা যাচাই হয় শিক্ষার্থীর গলাধঃকরণ ক্ষমতা ও কত দক্ষতার সাথে সাথে তা ৪ ঘন্টায় উদগীরনের কৃতিত্ব।
পরীক্ষা পদ্ধতিতে একাধিক পছন্দ, সত্য-মিথ্যা নিরূপন, শূন্যস্থান পূরণ, সংক্ষিপ্ত উত্তর, ফ্লাশকার্ড, গেমস, কুইজ, সিমুলেশন, এনিমেশন, কেস স্টাডি বিশ্লেষণ, মূল্যায়ণ, প্রকল্প উত্থাপন, ভার্চুয়াল ল্যাব ইত্যাদি ব্যবহৃত হয় বলে শিক্ষার্থীদের Committing to memory and thereafter vomiting in the examination hall এর প্রবণতা সীমিত হয়ে আসে। তাই অতি আমূদে বিষয় অধ্যায়ন ও ভবিষ্যতে প্রাপ্ত পরিস্থিতির সাথে খাপ-খাওয়ানোর ও পরিবেশ উপযোগী শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ বাড়ছে বলে অনলাইন শিক্ষার জনপ্রিয়তা করোনার আবির্ভাবের পূর্বেই বেড়েছে। নিয়োগকর্তাগণ তোতা পাখি অপেক্ষা ঈগল পাখি বেশি পছন্দ করেন। উপযুক্ত শিক্ষা পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা বা এলএমএম এর জন্যে একাধিক বিকল্প আছে। এসবের বিকল্পের মধ্যে আছে জুম, মুডল, স্কাইপ, ব্লাকবোর্ড আল্ট্রাা ইত্যাদি।
সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ জুম পোর্টাল অনুশীলন করে সিদ্ধান্তে এসেছে যে তার চেয়ে আমাদের জন্যে মুডল হচ্ছে সবচে উপযোগী। মুডল এ অবস্থার সাথে ব্যবস্থার সমন্বয় ঘটানো সম্ভব এবং যেকোন ফাঁকিবাজী রোধও সম্ভব। এই কারণে কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বান্ধব মুডল পোর্টাল ব্যবহার করছে। তারা মুডলকে জুমের একান্ত ফলপ্রসূ বিকল্প হিসাবে পেয়ে গেছে।
এলএমএস-এ প্রবেশাধিকার পেতে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট বা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করা যায়। জুমসহ অন্যান্য সহায়কগুলো মুডলের কার্যকারিতা বৃদ্ধির সহায়ক হয়ে থাকে। যেকোন স্থান থেকে এমনকি কারো ঘর থেকেই শিক্ষার্থী পড়ানো যায়। তাই ভৌতিক অবকাঠামো সৃষ্টি প্রান্তিক ভূমিকা পালন করে, কেউ ক্লাশ মিস করলেও তা পুষিয়ে নেবার জন্যে রেকর্ডকৃত তথ্যাদির আশ্রয় নেয়া যায়। এই ক্লাশগুলিতে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার এবং মিথসক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ আছে। এই শিক্ষার্থীরা সময়মত তাদের প্রবন্ধের বিষয়ে পড়াশুনা করতে পারে, শুধু পরীক্ষা পাশ নয় যুগোপযোগী জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে চাকরিদাতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অন্য অঙ্গনের সহপাঠিদের থেকে চাকরির বাজারে এগিয়ে থাকতে পারে।
আমাদের দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এই ব্যবস্থাটাও আরো উপযোগী। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর ভিড় নিদারুন। ক্লাশ ও শিক্ষা উপকরণের সমস্যাদিও কম নয়। আবাসিক সমস্যা এতো অভাবনীয় যে এক কক্ষে দু’জনের বদলে দশজন থাকে। মসজিদ, লাইব্রেরী এমনকি করিডোরকে আবাসন হিসাবে ব্যবহার করে। বাৎসরিক বা ষান্মাসিক পরীক্ষা পদ্ধতির বদৌলতে ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা সৃষ্টি সহজ হয়। তবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের প্রায় ৬০ ভাগ নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান সন্তুতি বলে এবং স্থায়ী নিবাস গ্রামে বলে; তাদের জন্যে প্রয়োজন। বিদ্যুতের অব্যাহত সরবরাহ, ব্রডব্যান্ড কার্যক্রমের সুলভ সম্প্রসারণ, প্রশিক্ষক ও ছাত্রদের হাতে ল্যাপটপ, আইফোন, হেডফোন ইত্যাদি।
এছাড়া অন্য অজুহাত উত্থাপনও করার সুযোগ রয়েছে, যেমন অনলাইন শিক্ষায় মানবিক স্পর্শের অভাব ও তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া। আমরা একবার আমরা বলেছিলাম বাঙালির হাত তিনটি, ডান, বাম ছাড়াও বাঙালির আরও একটি হাত আছে যার নাম অজুহাত। অনলাইন শিক্ষা ব্যক্তি স্পর্শের অভাব রয়েছে সে কথা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যায়না। তবে তা যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অপরিহার্য তা স্বীকার করারও জো নেই। তবে এ কথা স্বীকার্য যে প্রযুক্তির এই সুবিধা নিতে ইচ্ছে শক্তিটাকে প্রবল করতে হবে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের কোন সদ্য প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যদি সদিচ্ছা বলে অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে তাহলে সরকারের সামগ্রিক নেক নজরে থাকা স্বায়ত্বশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তা পারবে না কেন? দেবী শেটি বা অন্যান্য বিশিষ্ট জনরা আগামী দু’বছর আমাদের করোনা এড়ানো বা আত্মস্থ করার পথ বলেছেন।
স্বাস্থ্য বিধি মেনে ও ব্যক্তিক সং¯্রব নিয়ন্ত্রণে রেখেই তা হবে। সে কারনে অনলাইন কার্যক্রম শুধু শিক্ষাঙ্গনে কেন সর্বত্রই পরিব্যাপ্ত করতে হবে। আমাদের সৌভাগ্য আমরা তথ্য প্রযুক্তিতে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে আছি বলে পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনা সহজ হবে। তাই আমাদের ছূঁতানাতা বা অজুহাত ধরে শুভ দিনের অপেক্ষায় বসে থেকে গতানুগতিক শিক্ষা নিতে চাইলে আমরা পিছিয়ে যাব। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের জীবনযুদ্ধে পরাস্ত করে বসবে। মধ্যম আয়ের দেশের রূপান্তরের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। সে কারনে আমরা বলছি অনলাইন শিক্ষা শুধু চলবে না, চলবেই। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ কোন সমস্যাই হবে না, তবে ইন্টারনেটের উত্থান-পতন বা ফ্লাকটুয়েশন সমস্যাই বটে।
দেশে সৃষ্ট বিদ্যুৎ সুবিধা মাত্র ৪৭ ভাগ নাকি ব্যবহৃত হচ্ছে। অব্যবহৃত বিদ্যুৎ ক্ষমতার জন্যে সরকারকে রীতিমত গচ্ছা দিয়ে যেতে হচ্ছে। গচ্ছা যখন দিতেই হচ্ছে তা গরীব বা সামর্থহীন শিক্ষার্থীদের বিনা ব্যয়ে বা স্বল্প ব্যয়ে দেয়া যেতে পারে। ব্রডব্যান্ড সুবিধা নাকি বহুলাংশে অব্যবহৃত রয়ে যাচ্ছে। বিনামূল্যে এটাও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। ইতিমধ্যে বিদেশি কিছু প্রতিষ্ঠান ইউজিসির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার বা অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেবার প্রস্তাব দিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রদত্ত অনুরোধে ইউজিসি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শহীদুল্লাহসহ অন্যান্যদের সাথে আলোচনায় বুঝা গেছে ব্যক্তি ও সমষ্টির পর্যায়ে অনলাইন শিক্ষার সমস্যাদির স্বরূপ নির্ধারন এবং সে সব সমাধানে কি ব্যবস্থা নেয়া যায় সে ব্যাপারে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত হবে। ইউজিসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে অন্ততঃ ৬ মাসের অর্থায়নের সুপারিশ সরকারের কাছে পাঠিয়েছে। এ সমস্যা কিন্তু সরকারি বা স্বায়ত্ব শাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।
আশা করছি অনলাইন শিক্ষার সুনির্দিষ্ট দর্শনীয় প্রতিবন্ধকতা গুলো মুছে যাবে, তবে মনোস্তাত্ত্বিক প্রতিবন্ধকতাগুলো কবে ঘুছবে তা বলা কঠিন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কতিপয় শিক্ষক অনলাইন শিক্ষায় মানবিক স্পর্শের অভাবকে বড় করে দেখছেন এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষায় মানবিক স্পর্শের প্রয়োজনীয়তা যতটা রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তার প্রয়োজন এক দশমাংশও না। এ কথা আগেই বলেছি।
তবে আমাদের মানসিকতার সমস্যাটা বড় সমস্যা। অনলাইন শিক্ষা প্রবর্তিত হলে শুধু শিক্ষাঙ্গন নয় সমাজের প্রতিটি অংশীজন ও করদাতাগণ শিক্ষকদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবেন। আমাদের প্রস্তুতি থাকতে হবে কম্পিউটার থেকে বেশি বুদ্ধিমত্তা অর্জনের এমন দিন আসবে যখন আমরা কম্পিউটার থেকে এগিয়ে থাকার তাগিদে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব, স্মার্ট ফোনকে আমাদের সেবক হিসাবেই ব্যবহার করবো।
কারো কারো চাকরি চলে যাবার ভয় পেয়ে বসতে পারে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বড় হলে শিক্ষকের সংখ্যা কমে যাবে কিন্তু মানোন্নয়নে আগের মতো কিংবা আগের চেয়ে বেশি শিক্ষক নিয়োগ দিতেই হবে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষাঙ্গন থেকে ছাত্র রাজনীতি বর্জিত হবে। তাই নেত্রিত্ব আকাঙ্খা ছাত্ররা তা শুধু বর্জন নয়, প্রতিহতের ডাক দেবে। অনলাইন শিক্ষা প্রবর্তিত হলে বাড়ি ভাড়া, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, এয়ারকন্ডিশন ক্লাশ রুম, লিফট, জেনারেটর এর ব্যয় এবং পিয়ন চাপরাশির সংখ্যা কমে আসবে, বিরাট যান বহর রক্ষায় প্রয়োজন হবে না, কেন্টিন থাকবে না, লাইব্রেরী লাগবে না। এসবের কারণে স্বার্থ সংশ্লিষ্টরা অবশ্যই বিভিন্ন অজুহাতে বেঁকে বসতে পারেন।
সিঙ্গাপুরের মতো দেশে শিশুদের স্কুল খুলে দেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের দেশে তা করতে বলবো না কিন্তু সীমিত পরিমান অনলাইন শিক্ষা স্কুল বা কলেজ পর্যায়ে অব্যহত রাখতেই হবে। আমাদের হার্ড ইমিউনিটির আশ্রয় নিতে হবে। যুক্তরাজ্যে ধারনা করা হচ্ছে করোনা যাবেও না বা করোনাকে একমাত্র হার্ড ইউমিউনিটি ছাড়া অন্য ভাবে কাবু করা বা বাগে আনা যাবে না। তাই অজুহাত দেখিয়ে অনলাইন শিক্ষা থেকে বিরত থাকা হবে বোকামীর লক্ষন বা পিছনে পড়ার উপায়।
সহসাই অনলাইন শিক্ষায় মূল্যায়ণের সমস্যাগুলো বিতাড়নে নতুন পদ্ধতির উদ্ভব হবে। টোফেল বা জিআ্রই পরীক্ষায় বা বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষার সময়ে যে ধরনের ইনভিজিলেশন ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, আমাদের অনলাইন পরীক্ষাগুলোর ধরনে যদি পরিবর্তন না আনা যায়, ভার্চুয়াল ভার্সনে যদি ল্যাবগুলো সম্পূর্ণ করা না যায়, তাহলে স্বল্প সময়ের জন্য মিশ্র পাঠদান ও পরীক্ষা ব্যবস্থা ধরে রাখা যেতে পারে।
অনলাইনে ছাত্র ভর্তি ও তাদের কাছ থেকে ফি আদায়ে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এখানেও অসুবিধা নেই। আবারও বলছি প্রযুক্তি নয়, প্রযুক্তি ব্যবহারে মানসিক প্রতিবন্ধকতা উত্তরনের প্রস্তুতি নিতে হবে এবং তাহলে আমরা উচ্চ-শিক্ষার সর্বস্তরে অনলাইন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সম্ভব করতে পারবো।
লেখক : অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, শিক্ষাবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা। বর্তমানে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর উপাচার্য এবং অধ্যাপক ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী, অধ্যাপক, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।